যেসব কারণে ইরানের পাশে নেই আরব বিশ্ব

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার জেরে যখন আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ, তখন আরব বিশ্ব একটি অদ্ভুত নীরবতা পালন করছে। ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানালেও ইরানের প্রতি কার্যকর কোনো সমর্থন দেখা যাচ্ছে না। প্রশ্ন উঠছে, কেন ইরানের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে না সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো? বিশ্লেষকরা বলছেন, কূটনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে ইরানকে একঘরে রাখাই এখন এসব দেশের কৌশল।
চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক সানাম ভাকিল বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলো প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে ধিক্কার জানালেও অনেকেই মনে মনে তেহরানকে দুর্বল দেখলেই বেশি খুশি হবে। কূটনৈতিক চাপের কারণে দেশগুলো দ্বিমুখী আচরণ করছে। তারা কেউই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় না। আবার ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে নিজেদের যে মাশুল গুনতে হবে, তা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন।
প্যারিসের সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়নের অধ্যাপক করিম বিতার বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলি বুঝতে পারছে যে এই ইসরায়েলি আক্রমণ তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থের পাশাপাশি সমগ্র স্থিতিশীলতাকেও বিপন্ন করবে।
এক দশক আগেও সৌদি আরব ছিল ইরানি শাসনের অন্যতম সমালোচক। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে উদ্বেগ। ২০১৬ সালে তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল রিয়াদ। তবে চীনের মধ্যস্থতায় গত বছর আবারও সম্পর্ক পুনঃস্থাপন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
গত শুক্রবার ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর প্রথম দেশ হিসেবে সৌদি আরব নিন্দা জানায়। এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার, কুয়েত, বাহরাইনসহ অন্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোও একই পথে হাঁটে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব নিন্দা মূলত প্রতীকী, বাস্তবে তেহরানের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা নেই কারও।
ইরানের অন্যতম আঞ্চলিক মিত্র ছিলেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। গত ডিসেম্বরে তার সরকার পতনের পর সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার করে ইরান। ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে সিরিয়ার সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
অন্যদিকে, হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদেরও প্রায় নিষ্ক্রিয় করে তুলেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গাজা, লেবানন ও ইয়েমেনে একাধিক হামলায় এসব গোষ্ঠীর বহু যোদ্ধা নিহত হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে তাদের অস্ত্রভাণ্ডার। এর ফলে কার্যত একা হয়ে পড়ছে তেহরান।
ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে সরাসরি যুদ্ধ এড়িয়ে চলছে জর্ডান ও মিশর। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় এ দুই দেশও সংঘাতে জড়াতে চায় না।