প্রবাসীদের ভোটের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে বিএনপি

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আমরা শুনেছি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছে। আমরা তাদের বলেছি, আপনারা এখানে যা প্রেজেন্ট করলেন, আমরা শুনলাম। আমরা এটি আলোচনা করে দলের অবস্থান আপনাদের জানাব।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার বিষয়ে অংশীজনদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা সম্ভব, সে সম্পর্কে তিনটি ধারণাপত্র তারা উপস্থাপন করেছে।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনেরও আগে নির্বাচন কমিশন আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে যে প্রস্তাবগুলো করেছিলাম, সেটার নেতৃত্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছিল। সেখানেও কিন্তু আমরা প্রবাসীদের ভোটের অধিকার দাবি করেছিলাম। এরপর বিভিন্ন সময় এর পক্ষে কথা বলেছি। বাংলাদেশি প্রবাসীদের ভোটের অধিকার দাবি করেছিলাম। কাজেই নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগের প্রতি আমাদের শুধু সমর্থন না, এটা আমাদেরই দাবি। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে আমরা খুশি।
সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এখন কী প্রক্রিয়ায় এই ভোটগ্রহণটা সবচেয়ে উত্তম হবে, সবচেয়ে কার্যকর হবে, সবচেয়ে বেশি প্রবাসী নির্বিঘ্নে অংশ নিতে পারবে এবং তাদের ভোটটা যথাযথভাবে যেমন তারা চান, তেমন প্রার্থী পাবে— এটা নিশ্চিত করার জন্য কিছু প্রক্রিয়া, কিছু পদ্ধতির বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বেশকিছু ভালো প্রস্তাব এসেছে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, তার মধ্যে যে প্রস্তাবটা সবচেয়ে কার্যকর হবে, সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হবে, সবচেয়ে আধুনিক হবে, বাস্তবায়নযোগ্য হবে এবং সবচেয়ে সাশ্রয়ী হবে, সেটা বিবেচনা করতে হবে। কারণ, আমরা খুব অর্থবান জাতি না। মানুষের কল্যাণের জন্য অনেক কিছু করা আমাদের বাকি। সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য হতে হবে। সহজবোধ্য হতে হবে। এ রকম একটা প্রস্তাব আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা দেব।
এর আগে সেমিনারে নজরুল ইসলাম খান কথা বলেন, এই দুনিয়ায় কোনো সিস্টেমই ফুলপ্রুফ না। কোর্টশিপ করে বিয়েও ফুলপ্রুফ না। ফুলপ্রুফ হলে সংস্কার, বিপ্লবের প্রয়োজন হয় না। আমরা বিবেচনা করব সবচেয়ে যেটা সহজ, বোধগম্য হবে, সবচেয়ে যেটা গ্রহণযোগ্য হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে, যেটা সবচেয়ে সাশ্রয়ী হবে, যে প্রক্রিয়ার প্রতি আমরা সম্মত হতে পারব বলে আশা করি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই যে পারসেন্টেজের কথা বলা হচ্ছে, এটার কোনো নির্ভরযোগ্যতা আছে কি না বলা যাবে না। একটা উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি ২৯ লাখ আছে ভারতে। আসলেই এটা সঠিক? ভারতে কি এত মানুষ আছে? ইউটিউবের সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সূত্র নেই।
নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ থেকে কত মানুষ প্রবাসে স্থায়ী হতে যায়, এই তালিকা কোথাও নেই। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বা বিএমইটি, কোথাও নেই। কত প্রবাসী ফিরে এসেছে সেই তালিকাও নেই। কাজেই এসব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমেরিকার নাগরিক বাংলাদেশে আসলে তাদের দূতাবাসে রিপোর্ট করতে হয়। আমাদের দেশের নাগরিকদের জন্য এমন সিস্টেম নেই। আমি নিজে দেখেছি অনেক প্রবাসীর পাসপোর্ট নেই। অনেকেই আবার মৃত ব্যক্তির পাসপোর্টে প্রবাসে যায়। তাই শুধু এনআইডি বিবেচনায় নিয়ে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করলে হবে না। কেননা, সবার এনআইডি নেই। তাই পাসপোর্টও বিবেচনায় নিতে হবে। আবার অনেকের কোনোটাই নেই। এই বিষয়গুলোর কী হবে?
সেমিনারে তিনি বলেন, আমাদের দূতাবাসগুলোর যে অবস্থা তাতে তাদের ওপর ভরসা করলে রিস্ক হবে। কারণ দূতাবাসগুলো তো প্রবাসীদের প্রয়োজনীয় সেবাই দিতে পারে না। কাজেই তাদের কতটুকু কাজে লাগানো যাবে, প্রশ্ন থেকে যায়। দূতাবাসের সঙ্গে ইসির লোকবল যদি থাকে, সেটা যদি করা যায়, ডাটাবেজটা থাকলে অনেক কাজে লাগবে।
নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা যাদের মর্যাদাবান বলি— ডাক্তার, শিক্ষক, বছরের পর বছর তারা টাকা পাঠান না। টাকা পাঠান শ্রমিকরা। অথচ মর্যাদা দেওয়া হয় যারা বড় বড় পদে আছে বা অ্যাম্বাসির সঙ্গে যাদের খাতির আছে।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, এটা ঠিক যে বহু জেলা আছে যেখানে প্রবাসী খুব কম। আবার কিছু জেলা আছে সেখানে এত প্রবাসী যে তারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। প্রভাবিত করলে অসুবিধা নেই। তারা যদি দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, নির্বাচন ব্যবস্থাকেও যদি পাল্টে দিতে পারে, দিক না।