ভারতে ’আই লাভ মুহাম্মদ’ বললেই গ্রেফতার!

ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার মুখে যেন আরেকবার চপেটাঘাত করলো কট্টোর ইসলাম বিদ্বেষী নরেন্দ্র মোদির সরকার। ‘আমি মুহাম্মদকে ভালোবাসি’ এই সরল, শান্তিপূর্ণ ও ধর্মীয় অনুভূতির বাক্যটিই এখন রীতিমতো শাস্তিযোগ্য ‘অপরাধ’। আমাদের রাসূল (সা.) এর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করা হয় কথাটি বলে। আর এতেই যেনো জ্বলছে কট্টোর হিন্দুত্ববাদীরা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে, বিশেষ করে উত্তর প্রদেশে, মুসলিম তরুণদের শুধু এই বাক্য লেখা টি-শার্ট পরার জন্য আর  সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার জন্য গ্রেফতার করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমনকি বুলডোজার চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের ঘরবাড়ি—যেন ভালোবাসার জবাবে ঘৃণাই একমাত্র প্রতিক্রিয়া! মোদি সরকারের।

ঘটনার সূচনা গত সেপ্টেম্বরে। নবীজির জন্মবার্ষিকী ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে কানপুর শহরে একটি পোস্টার টানানো হয়, যেখানে লেখা ছিল—‘আই লাভ মুহাম্মদ’। এই বার্তাটিকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয় বিতর্ক। স্থানীয় হিন্দু চরমপন্থীদের অভিযোগ—এটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নতুন সংযোজন, যা রাজ্যের নিয়মবিরুদ্ধ।

এরপর শুরু হয় পরিকল্পিত ধরপাকড়। শুধু কানপুর নয়, বরেলি, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড—প্রায় প্রতিটি বিজেপি শাসিত রাজ্যেই মুসলিম তরুণদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে মামলা ও গ্রেফতার শুরু হয়।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত এই ঘটনায় ২২টি মামলায় আড়াই হাজার জনেরও বেশি মুসলমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত ৪০ জনকে। এদিকে বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, 'আই লাভ মুহাম্মদ' কোনোভাবেই ভারতের সংবিধানবিরোধী নয়। দেশটির সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রত্যেক নাগরিকের ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে। এমনকি ১৯(১)(ক) ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে—প্রত্যেকের মতপ্রকাশের অধিকার রয়েছে, যতক্ষণ না তা সরাসরি সহিংসতা উসকে দেয়।

এই ঘটনায় অনেকের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে বেরেলিতে বিক্ষোভ হয়, যেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।ঘটনার এখানেই শেষ নয়। অন্যদিকে বিজেপি নেতারা এখানেই থেমে থাকেননি। মোদির নিজ নির্বাচনি এলাকা বারাণসীতে তারা ‘আই লাভ বুলডোজার’ লেখা পোস্টার টানিয়েছেন, যেন মুসলিমদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজকে রীতিমতো উদযাপন করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এটিকে "ঘৃণার রাজনীতি"র একটি বিপজ্জনক ও সুপরিকল্পিত রূপ বলেই মনে করছেন।

‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তরুণ মুসলিমরা। কেউ শুধু একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন, কেউ একটি স্লোগান দেওয়া টি-শার্ট পরেছেন—আর এতেই রাতারাতি হয়ে গেছেন অভিযুক্ত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি নিছক ধর্মীয় ইস্যু নয়—এটা মুসলিমদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রান্তিক করার আরেকটি কৌশল মাত্র।